শিহাব ও সোহানা সুখেই সংসার করছে। পরস্পর পরস্পরকে ভালোই বোঝে। দু’জনের সংসারে রয়েছে একমাত্র কন্যা সিনথিয়া। সিনথিয়ার বয়স মাত্র তিন বছর। এ বয়সেই সিনথিয়া অনেক ভদ্র ও সামাজিক। শিহাব ও সোহানার বাসায় বেড়াতে এসেছেন সুইটি আন্টি। আন্টি সিনথিয়ার সাথে কথা বলছেন। সিনথিয়ার আচার-আচরণে মুগ্ধ হচ্ছেন। বিদায় বেলায় আন্টি সোহানাকে বললেন, সিনথিয়া আধুনিক পরিবারের সন্তান তো, তাই তাকে এত ভদ্রতা ও সামাজিকতা শেখাতে পেরেছো।

সোহানা চিন্তা করছেন আমরা এত সাধারণ চলাফেরা করি, আমরা কিভাবে আধুনিক পরিবার; আন্টি কি বললেন এটা? সোহানা শিহাবকে বললেন, আন্টি আমাদের আধুনিক পরিবার বললেন। আসলে আধুনিক পরিবার মানে কি? শিহাব বললেন, যে পরিবার আকারে বেশ ছোট, অর্থাৎ যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করেন। তাদের সন্তান থাকতেও পারে আবার নাও পারে, এমন পরিবারকে আধুনিক পরিবার বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, ছোট পবিারকে আধুনিক পরিবার বলে।
সোহানা বললেন, তাহলে আমাদের বাবা-মা যেসব পরিবারে ছিলেন, সেসব পরিবারকে কী বলা হয়? শিহাব বললেন, যেসব পরিবারে সদস্য সংখ্যা দশজন বা এর বেশি সেসব পরিবারকে ট্রাডিশনাল বা প্রাচীন পরিবার বলা হয়। সোহান বললেন, বুঝলাম। আধুনিক ও প্রাচীন পরিবারের পার্থক্য। এবার উঠো, হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নাও। শিহাব ফ্রেশ হলো। ডাইনিংয়ে বসলো। নিজে খাচ্ছে এবং মেয়ে সিনথিয়াকে খাওয়াচ্ছে। কখনো কখনো সোহানার সাথে কথাও বলছে। শেষ হলো খাওয়া দাওয়া। ঘুমানোর জন্য তারা বিছানায় গেল। শিহাবের ঘুম আসছে না। সোহানা বলল, যেহেতু তোমার ঘুম আসছে না। তাহলে আমাকে বলো, আধুনিক পরিবারে নারীদের ভূমিকা কী কী হতে পারে। আমার পরিবারে আমার ভূমিকা ঠিক আছে কি-না, তাও এ সুযোগে যাচাই করে নেই।
শিহাব বলা শুরু করলেন, আধুনিক পরিবারে নারীর নানান ভূমিকা থাকতে পারে। এর মধ্যে মোটা মোটা ভূমিকা হলো-

স্ত্রীর ভূমিকা শতভাগ পালন করা
স্বামী চলে গেলে বাসা খালি হয়ে যায়। এ সময় স্ত্রী যা খুশি করতে পারে। স্ত্রীর মনে কোনো অনৈতিক চিন্তা আসলে, সাথে সাথে তা দূর করে ফেলা। অপ্রয়োজনে পরিবারের বাইরের কোনো পুরুষের সাথে কথা না বলা এবং দেখা না করা। এখন ডিজিটাল যুগ। চাইলেই অনেক খারাপ কাজ করা যায়। কিন্তু সবসময় এ কথা চিন্তা করা যে, স্বামী আমার এ ব্যাপারে জানলে কষ্ট পাবে। এ চিন্তা করে নিজের স্বচ্ছতা ও সতীত্ব বজায় রাখা।
একইভাবে যেসব স্ত্রী চাকরি করেন। তারা ৯-১০ ঘন্টা স্বামী থেকে দূরে থাকেন। এ সময় তাদের অনেক পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলতে হয়। সুবিধা-অসুবিধা আলোচনা করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতেও স্ত্রীর এই চিন্তা করা, আমার জীবন সঙ্গী আছে। অতএব আমার এমন কাজ করা চলবে না, যা তার চোখে পড়লে বা কানে গেলে সে কষ্ট পাবে। অর্থাৎ সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয় বা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়, এমন কোনো কাজ স্ত্রীর করা ঠিক নয়। সবসময় সচেতন থাকা।

অংশীদারিত্ব ভূমিকা থাকা
স্বামী সারাদিন বাইরে থাকেন এবং স্ত্রী-সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে উপার্জন করেন। স্ত্রীর উচিৎ ঘরের সব কাজ সুষ্ঠুভাবে করা এবং স্বামীর মুখে হাসি ফোটানো। এটাই হলো যথাযথ অংশীদারিত্ব। একজন বাহির সামাল দিবে এবং অন্যজন ঘর সামলাবে।যদি স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই চাকরি করেন। তাহলে চেষ্টা করা একই সময় বাসায় ফেরার জন্য। বাসায় ফেরার পর একই সময়ে ফ্রেশ হয়ে নেওয়া। দু’জন মিলেমিশে রান্নাবাড়ি করা এবং একত্রে খাওয়া। ঘর পরিস্কার করার প্রয়োজন হলে দু’জন মিলে পরিস্কার করা। একসাথে ঘুমাতে যাওয়া এবং কিছু সময় নিজেদের আলোচনা ও গল্প সেরে নেওয়া। যেহেতু দু’জনই উপার্জন করছে, সংসারে দু’জনেরই খরচ করা উচিৎ। উপার্জিত অর্থ সংসারে ব্যয় করতে সমস্যা হলে, স্বামীর সাথে এই বিষয়ে আলাপ করে নেওয়া।

সংগঠক হওয়া
একজন সংগঠক সংগঠনের যত প্রয়োজন আছে পূরণ করেন। সংগঠনের প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে কখনো আলোচনা করেন। কখনো এখানে ওখানে দৌঁড়ান। কখনো ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করেন আবার কখনো শক্ত মানুষে পরিণত হয়ে যান। একইভাবে স্ত্রীকেও সংসার সাজিয়ে রাখতে, স্বামীর সাথে আলোচনা করতে হবে। স্বামীকে পরামর্শ ও বুদ্ধি দিতে হবে। কোনো কাজ স্বামী একলা করতে না পারলে, স্ত্রীর উচিৎ হবে স্বামীকে সহায়তা করা। কোনো কাজ করতে গিয়ে উভয়ে আটকে গেলে, সেখানে স্বামী যেরকম সমাধান বের করার চেষ্টা করবেন। একইভাবে স্ত্রীকেও সমাধান বের করার চেষ্টা করতে হবে। কোনো কাজে সঠিক বুদ্ধি ও পরামর্শ দেওয়া সত্ত্বেও যদি স্বামী না শোনেন, তাহলে স্ত্রীর করণীয় হবে খানিকটা ইতিবাচক কঠোর হওয়া। যে কঠোরতার কারণে স্বামী বুঝতে পারবেন যে, সংসারের ভালোর জন্যই আপনি কঠোর হয়েছেন। পরবর্তীতে ভালো পরিণাম দেখলে স্বামী নিজেই বলবেন, তোমার কঠোরতার কারণেই আজ ভালো কিছু হলো!

প্রশাসক হওয়া
আধুনিক পরিবারে সন্তান যেহেতু বাবা-মায়ের অধীনেই সবসময় থাক। এ পরিবারের সন্তান বাবা-মা ছাড়া কারও কথা শুনতে চায় না। তাই মায়ের উচিৎ বাবার অনুপস্থিতিতে সন্তানকে যৌক্তক শাসন করে সঠিক পথে রাখা। সন্তানের আচার আচরণ যেন নিন্দনীয় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। সন্তানকে সামাজিক, মিশুক ও সভ্য-ভদ্র বানাতে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। যদি মা চাকরি করেন, সেক্ষেত্রে সন্তানকে গৃহপরিচারিকার দায়িত্বে রেখে যাওয়া হয়। গৃহপরিচারিকা সাধারণত ঘরের নারীর অধীনেই কাজ করেন। তাই গৃহপরিচারিকাকে এমনভাবে নির্দেশ দেওয়া, যাতে সে সন্তানকে অসামাজিক ও নিন্দনীয় কোনো কিছু না শেখায়। সন্তানের যত্ন ঠিকমত নেয়।
গৃহপরিচারিকা দিয়ে নারীরা ঘরের অনেক কাজ করিয়ে নেন। সবকাজ ঠিকমত করছে কি-না তা দেখার দায়িত্ব নারীর। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা, প্রশাসকের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে যেন গৃহপরিচারিকার ওপর অত্যাচার না হয়ে যায়। অতিরিক্ত কাজ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়।

সৃজনশীল হওয়া
আধুনিক পরিবারের থাকে কেবল স্বামী ও স্ত্রী। কখনো কখনো সন্তান। পরামর্শ দেওয়ার মতো মাথার উপর তেমন কেউ থাকে না। তাই বাসাবাড়ি আকর্ষণীয় করে রাখার জন্য নারীর সৃজনশীল হওয়ার বিকল্প নেই। বাসার কোন জিনিস কোথায় থাকবে, তা গুছিয়ে রাখা। কোথায় সোফা বসালে ভালো হয়। কোথায় শোপিস রাখলে ও ওয়ালমেট টাঙালে সুন্দর দেখাবে, এসব চিন্তা নারী যত করবেন বাসা-বাড়ি তত আকর্ষণীয় হবে।

নিয়ম মানানো ও গুছিয়ে রাখতে শেখানো
স্ত্রী নিয়ম মেনে চলবেন এবং সবকিছু গুছিয়ে রাখবেন। এতে করে সন্তান থাকলে সেও শিখবে যে, সবকিছু গুছিয়ে রাখতে হয় এবং নিয়ম মেনে চলতে হয়। বাস্তবতার কারণে কখনো কখনো পুরুষ মানুষ বাসার জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারেন না। নিয়ম মেনে চলতে পারেন না। এ বিষয়গুলো নারী কৌশলে ম্যানেজ করে নিবেন। এমন সিস্টেম বের করবেন, যেন পরিবারে অশান্তি ছাড়াই নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে। বাসা গুছানো থাকে।
একটা ঘটনা মনে পড়লো। একদিন এক বাসায় গেলাম, দেখলাম খাওয়ার পর সবাই সবার প্লেট পরিস্কার করে ধুয়ে যথাস্থানে রেখে দিচ্ছে। এছাড়াও স্বামী ভাতের পাতিল ধুয়ে দিলেন, সন্তান ডালের পাতিল পরিস্কার করে দিলো এবং স্ত্রী বাকি কাজগুলো করলেন। অল্প সময়ের মধ্যে বাসা ঝকঝকে। সন্তানের কাছে জানতে চাইলাম, এ নিয়ম কে চালু করেছে? সে বললো, আম্মু। চিন্তা করুন, নারীর ভূমিকায় একটা পরিবারের সবাই স্বেচ্ছায় কাজ করছে। অল্প সময়ের মধ্যে বাসা পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠছে। এ শিক্ষা নারী যদি না দিতেন, তাহলে সব কাজ তার করতে হতো বা গৃহপরিচারিকার জন্য ফেলে রাখা হতো।

দায়িত্ববান শিক্ষিকার ভূমিকা পালন করা
সন্তানের শিক্ষার হাতেখড়ি মা হয়ে থাকেন। এজন্য শৈশব থেকেই সন্তান যা শিখবে, তা যেন ভালোভাবে ও শুদ্ধভাবে শিখে; সেদিকে মায়ের বিশেষ নজর রাখা। তিনি যা শেখাচ্ছেন, তা শুদ্ধ শেখাচ্ছেন কি-না, সেটাও যাচাই করে নেওয়া।
তথ্যসূত্র: (লেখায় ইংরেজি কনটেন্টের বাংলা সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে)
ছবি- ফ্রিপিক
https://www.yourarticlelibrary.com/family/role-of-women-in-the-family-and-society/47638
ttps://www.psychologydiscussion.net/difference-between/difference-between-modern-family-and-traditional-family-psychology/13671
পাঠকরা যা বলছেন

"আমি শুধু বলতে চাই আপনার নিবন্ধগুলির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! আমার প্রবলেম ছিল, এখানে প্রাপ্ত সমস্ত তথ্য অত্যন্ত সাহায্য করেছে। আপনি আমাকে আশা এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।"

"আমাদের মেইলিং তালিকায় সদস্যতা নিতে পৃষ্ঠার নীচে আপনার ইমেল ঠিকানা লিখতে ভুলবেন না, যাতে আপনি সর্বশেষ বিষয়বস্তু, নতুন পণ্য এবং লেটেষ্ট ব্লগ এর নোটিফিকেশন দ্রুত পেতে পারেন ।"
লিখাটি নিয়ে আপনার অভিমত