002 3 linnet

কোটি কোটি মেয়ে সংসার করছে, শুধু তুই পারিস না সংসার করতে। যত সমস্যা তোর। পড়াশোনাও ঠিকমত করতে পারিসনি। একটা চাকরিও জুটাতে পারিস না। তোর বান্ধবীরা সবাই সংসার ও চাকরি দুটাই করছে। বাবা-মায়ের মাথার উপর চেপে বসতে পারলেই তোর শান্তি। বাসা থেকে বের হয়ে যা। এরকম মেয়ের আমার দরকার নেই। এ ধরনের নানান কথা প্রতিদিন শুনতে হয় নাসিমাকে।

007 5 linnet

নাসিমা চিন্তা করে, আমি তো সংসার করতে চেয়েছিলাম। ডিভোর্স তো আমার স্বামী আমাকে দিলো। কিন্তু দিনশেষে দোষ হচ্ছে আমার। আমি না-কি সংসার করতে পারি না। এসব চিন্তা করতে করতে নাসিমা মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছে। হার্টেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। কী করা যায়? বাবা-মা থেকে কীভাবে দূরে থাকা যায়, সে চিন্তা করছে নাসিমা।

নাসিমার তিন বছরের ছেলে নাইম। মা কান্না করে এবং দুশ্চিন্তা করে। প্রতিদিনি এ চিত্র দেখতে দেখতে নাইমও অসুস্থ। সে এখন কারো সাথে কথা বলে না। কিছুই খায় না। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাক্তার বলেছে, নাইম বেশিদিন বাঁচবে না।ডিভোর্স হওয়ায় নাসিমার মতো এরকম কঠিন জীবনযাপন করছে অনেক নারী। পুরুষরা যে আরামে থাকে, ব্যাপারটা তা নয়। চলুন, আরেকটা ঘটনা পড়ি।

009 4 linnet

তাহমিনা ও তাহমিদের ১০ বছরের সংসার। তাদের ১০ বছরের সংসারে আছে একজন কন্যা সন্তান। হঠাৎ কী যে হলো, তাহমিনা চলে গেলো বাবার বাড়ি। অনেক বুঝিয়েও তাকে ফেরত আনা গেল না। কিছুদিন পর নারী নির্যাতন মামলায় তাহমিদকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ। তাহমিদ অবাক হলো, কে তার নামে নারী নির্যাতন মামলা করলো? জিজ্ঞেস করে জানলো, তার স্ত্রী তার নামে নারী নির্যাতন মামলা করেছে! তাহমিদ স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বললেন, তোমাকে তো নির্যাতন করিনি; মামলা কেন? তাহমিনার এক কথা, তোকে জেলে মারবো। তাহমিদ পাঁচ বছর ধরে জেলে আছে। জামিন পাওয়ার জন্য জায়গা-জমি সব বিক্রি করেছে। কিন্তু জামিন হয়নি তার!অন্যদিকে বাবা জেলে এবং মা ছেড়ে চলে গিয়েছে। অযত্ন ও অবহেলায় একমাত্র কন্যা আনিকাও মারা গেল কয়েক মাস আগে!সংসারে বিচ্ছেদ হওয়ার পর কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় নারী ও পুরুষ উভয়কে। কেউ কেউ বিচ্ছেদের পর সাময়িক শান্তি পেলেও, পরবর্তীতে বুঝতে পারেন অশান্তি কত রকমের হতে পারে।

কেন ডিভোর্স হয় এবং ডিভোর্সের পর কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে নিজের সন্তানের উপর, এসব বিষয় তুলে ধরা হলো আজকের লেখায়।

0010 4 linnet

ডিভোর্স কেন হয়?

স্বামী নেশাগ্রস্ত তার সাথে সংসার করা যাবে না। স্ত্রী পরকিয়া করছে, এরকম নারীর সাথে সংসার করা যায় না। এরকম নানা কারণেই হয়ে থাকে ডিভোর্স।অতীতে ডিভোর্স হতো যৌক্তিক কারণে। বর্তমানে ডিভোর্স হয় ঠুনকো কারণে। বেড়ে গিয়েছে ডিভোর্সের সংখ্যাও। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষিত নারীদের বেশি ডিভোর্স হচ্ছে। পরিসংখ্যান এমন তথ্য দেয় আমাদের।

মানসিক প্রভাব

ডিভোর্স হলে সর্বপ্রথম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মনের উপর। কেন আমার ডিভোর্স হলো। কেন আমাকে ডিভোর্স দেওয়া হলো। এখন আমার কী হবে। নতুন করে যার সাথে সম্পর্ক হলো বা হবে, সে কি ভালো মানুষ হবে? এরকম অনেক দুশ্চিন্তা মনে আসতে থাকে।যার সাথে ডিভোর্স হয়েছে, তার স্মৃতি মনে পড়লে, শুরু হয় খারাপ লাগা। আবার এমনও হয় যে, ঘৃণার পরিমান খুব বেশি থাকে। প্রতিশোধ নিতে মন চায়। কিন্তু ক্ষমতা না থাকায় প্রতিশোধ নিতে না পারলে, আক্ষেপের পরিমাণ বেড়ে যায়। মানুষজনের নানান কথা শুনতে হয়। ডিভোর্সি মেয়ে, তোমাকে আর কে বিয়ে করবে? বর্তমান সমাজে তো আরও খারাপ কথা শুনতে হয়। এ ধরনের কথাবার্তা একজন মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে দেয়।

006 3 linnet

ডিজিটাল যুগের  প্রভাব

যদি কোনো নারী বা পুরুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিভোর্স সংক্রান্ত পোস্ট করে, প্রথম প্রথম মানুষ ভালো ভালো কমেন্ট করে। কিন্তু চলাফেরা খানিকটা এদিক ওদিক দেখলে বা অপছন্দনীয় কথাবার্তা শুনলে, শুরু হয়ে যায় নেতিবাচক মন্তব্য। যার মাথায় যা আসে, সে তাই কমেন্ট করতে থাকে। এসব নেতিবাচক মন্তব্য সহ্য করে নেওয়াও কঠিন হয়ে যায়। ফলে মানসিক রোগী হয়ে যায় মানুষ। কখনো কখনো আত্মহত্যা করে থাকে ভুক্তভোগী।

সাম্প্রতিক ঘটনা

গত আগস্ট মাসে নাটোরে একজন শিক্ষিকা তার ছাত্রকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। এরপর তাদের বিয়ের ঘটনা গণমাধ্যমের সুবাদে ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশে। মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করতে শুরু করে। মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ওই শিক্ষিকা।এখানে পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন যে, এটা তো ডিভোর্সের ঘটনা না? জি, এটা ডিভোর্সের ঘটনা না। কিন্তু মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য সহ্য করতে না পেরে, নাটোরের শিক্ষিকার মতো অনেকেই আত্মহত্যা করছে। সবার ঘটনা আমাদের সামনে আসছে না। নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার ডিভোর্সিরা বেশি হয়। তাদের জীবনটাও শিক্ষিকার জীবনের মতো কঠিন হয়ে যায়। কঠিন বাস্তবতা বুঝানোর জন্যই এ ঘটনা উল্লেখ করা হলো।

008 3 linnet

শারীরিক প্রভাব

যখন মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়। তখন সে শারীরিক নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। মানসিক সমস্যার কারণে ঠিকমতো ঘুম হয় না। লম্বা সময় ঘুম না হওয়া এবং দুশ্চিন্তার কারণে হার্টের সমস্যা হয়। কখনো কখনো ব্রেন স্ট্রোক হয়। এরকম অনেক অনেক বড় বড় রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। যেসব রোগ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

অর্থনৈতিক প্রভাব

এখন বিয়ের সময় মেয়েরা সিকিউরিটি মানি হিসেবে ২০-৫০ লাখ কিংবা আরও বেশি টাকা কাবিন ধার্য করে। যখন ডিভোর্স হয়ে যায়, এই টাকার জন্য মেয়েরা ছেলেদের চাপ দিতে থাকে। এত এত লাখ লাখ টাকা ছেলে কোথা থেকে দিবে, এ দুশ্চিন্তায় ডিভোর্সের সাথে সাথে ছেলে মানুষ জীবন্ত লাশ হয়ে যায়। মামলা থেকে বাঁচার জন্য এখান থেকে ধার করে ওখান থেকে নিয়ে মোহর পরিশোধ করে। এতে ছেলে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেখান থেকে অনেক ছেলে মানুষ ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারে না।

005 5 linnet

দেন মোহরের অর্থ পেয়ে মেয়েরা যে খুব লাভবান হয়; বিষয়টা তাও না। ডিভোর্সের পর মেয়েরা মা-বাবা বা ভাইবোনের অধীনে চলে আসে। প্রথম কয়েকদিন কেউ কিছু না বললেও, ধীরে ধীরে সবাই বড় বড় কথা বলতে শুরু করে। সবার মুখ বন্ধ করতে প্রাপ্ত মোহরের টাকা বাবা-মা ও ভাইবোনকে দিয়ে দিতে হয়। একটা সময় পর মেয়ের হাতে কোনো টাকা থাকে না। মানুষের বড় বড় কথা শোনা ছাড়া তার সামনে কোনো উপায় থাকে না। লাখ লাখ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করতে গিয়ে ছেলে ঋণগ্রস্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে সবার মুখ বন্ধ করতে গিয়ে মেয়ের হাত শূন্য হয়ে যায়।যদি কোনভাবে মোহরের টাকা পরিশোধ করতে না পারে এবং মেয়ে মামলা ঠুকে দেয়। তাহলে তো ছেলের সহায় সম্পত্তি সব শেষ হয়ে যায়। মামলা চালাতে গিয়ে মেয়েরও অপচয় করতে হয় অর্থ।

004 2 linnet

সন্তানের উপর প্রভাব

বাবা-মায়ের ডিভোর্স হলে, সন্তানকে হয় বাবা থেকে না হয় মা থেকে দূরে থাকতে হয়। সন্তান হয় বাবার আদর থেকে না হয় মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়। এ আফসোস সন্তানের মনে সারাজীবন থাকে। এ আফসোস থেকে তার মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। এ হতাশা তাকে নেশাগ্রস্ত বানায়। হতাশা থেকে জন্ম নেওয়া রাগ ও ক্ষোভের কারণে অনেক সন্তান অন্ধকার পথে পা বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ বাবা-মায়ের ডিভোর্সের কারণে সন্তানের জীবন ধ্বংস হয়।

001 4 linnet

ডিভোর্সের নেতিবাচক প্রভাবই বেশি। তাই হুটহাট ও অযৌক্তিক কারণে কখনো ডিভোর্স কাম্য নয়। আমাদের সমাজে কমে যাক ডিভোর্স এবং স্থায়ী হোক ভালোবাসার সম্পর্ক; এমনটাই আশা সবার কাছে।

তথ্যসূত্র: (লেখায় ইংরেজি কনটেন্টের বাংলা সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে)

ছবি- ফ্রিপিক

Shop at Linnet
Total
0
Shares

Leave a Reply