009 17 linnet

অনিক বলল, আম্মু আমি এ স্কুলে না, ওই স্কুলে পড়ব। মা মাথা নিচু করে বললেন, বাবা, ওই স্কুলে অনেক খরচ। আমাদের তো সেই সামর্থ্য নেই। অনিক চুপ হয়ে গেল। সন্তানের আবদার পূরণ করতে না পেরে মা গোপনে কাঁদতে শুরু করলেন।

সন্তান আবদার করবেই, এটা স্বাভাবিক। সব আদার পূরণ করা সম্ভব না, এটাও যৌক্তিক। তবে অধিকাংশ সময় সন্তানের আবদার পূরণ করতে পারলে, বাবা-মায়ের কাছেই ভালো লাগে।

কীভাবে আমরা অর্থ সঞ্চয় করে সন্তানের আবদার ও নিজের প্রয়োজন পূরণ করতে পারি, এ লেখায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

006 21 linnet

সঞ্চয় করতে হলে আগে খুঁজে বের করতে হবে, কোথায় আমার অর্থ অপচয় হচ্ছে। যদি এটা খুঁজে বের করতে পারি, তাহলে আমার সমস্যার সমাধান অর্ধেক হয়ে যাবে। এরপর অপচয় বন্ধ করে দিলে বাকি অর্ধেক সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে। তাহলে দেখি আমাদের অপচয়ের খাত কোনগুলো।

বিদ্যুৎ অপচয়

আমরা এক ঘর থেকে আরেক ঘর যাই। লাইট-ফ্যান বন্ধ করি না। এতে লম্বা সময় লাইট-ফ্যান চলতে থাকে। বিদ্যুৎ অপচয় হয়। মাস শেষে বিদ্যুৎ বিলে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। যা অনর্থক খরচ।এছাড়াও এমন হয় যে আবহাওয়া ঠান্ডা। এসি না চালালেও চলে। এরপরও আমরা অনেকে এসি চালিয়ে রাখি। এতেও প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। মাস শেষে বিল দেওয়ার জন্য গুনতে হয় বাড়তি টাকা। মোবাইল চার্জ দিয়ে মোবাইলের চার্জার খুলি না, এমনকি সুইচও বন্ধ করি না। মনে করি, এতে আর তেমন কী বিদ্যুৎ যায়! এরকম অনেক ছোট ছোট বিষয় আছে, যেখানে বিদ্যুৎ অপচয় হয়ে থাকে। যদি আমরা বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে পারি, তাহলে প্রতিমাসে আমাদের অনেক অর্থ বেঁচে যাবে। দেশের সম্পদেরও যথাযথ ব্যবহার করা হবে।

002 19 linnet

পানি অপচয়

আমরা যারা শহরে থাকি, আমাদের পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। এমনকি গ্রামে যারা থাকে, তাদেরকেও বিদ্যুৎ খরচ করে পানি উঠাতে হয়। তাই পানি অপচয় রোধ করতে পারলে, মাস শেষে খরচ কমে আসবে।

গ্যাস অপচয়

একটা রান্না শেষ হয়ে গেলে আরেকটা রান্না বসাতে যে সময় লাগে, তখন আমরা চুলা জ্বালায় রাখি। চুলা বন্ধ করে আবার চুলা জ্বালাতে আমাদের অলসতা লাগে। এ সময়ই অপচয় হয়ে যায় অনেক গ্যাস। আমরা একটু সচেতন হলে এবং আমাদের অলসতা কমালে, প্রতিমাসে অনেক গ্যাস সাশ্রয় হয়। এতে করে দেশের সম্পদ রক্ষা হবে এবং আমাদের খরচ কমে আসবে।

005 21 linnet

মোবাইল ডাটা

ডিজিটাল এই যুগে আমরা প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট চালিয়ে থাকি। কখনো ফেসবুক তো, কখনো টিকটক। কখনো ইউটিউব তো, কখনো ইন্সটাগ্রাম। এমনও অনেক মানুষ আছে, যারা ফেসবুক বা ইন্টারনেট আসক্ত। এই আসক্তি আমাদের স্বাস্থ্যের যেরকম ক্ষতি করছে, একইভাবে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতিও করছে। যদি আমরা রাউটার বা ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকি। অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে আমাদের রাউটার ২৪ ঘন্টা চালু থাকছে। এতে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। মাস শেষে ইন্টারনেট বিলের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলও গুনতে হচ্ছে আমাদের। আর যদি আমরা ডাটা ব্যবহার করে থাকি, তাহলে ডাটা কিনতে আমাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এজন্য ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকা। অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার না করা।

নতুন মোবাইল কেনা

আমাদের অনেকের স্বভাব আছে, কিছুদিন পর পর মোবাইল পরিবর্তন করা। যুগের সাথে তাল মেলাতে, আমরা এরকম করে থাকি। লেটেস্ট মডেলের ব্যবহার করে, সমাজে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চাই আমরা। এরকমটা উচিৎ নয়।

যে মোবাইলে আমার প্রয়োজন পূরণ হচ্ছে, সে মোবাইল ব্যবহার করতে থাকা। যখন মনে হবে যে, এই মোবাইল দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না তখন পরিবর্তন করে নেওয়া। তাহলে কিছুদিন পর পর যে অর্থ খরচ হচ্ছে মোবাইল কেনার জন্য, তা বেঁচে যাবে।

007 16 linnet

 বাইরে বেশি না খাওয়া

আমরা অনেকেই একদিন দু’দিন পর পরই রেস্টুরেন্টে খাই। যতটুকু খেতে পারি, তার চেয়েও বেশি অর্ডার করি। খাবারও নষ্ট হয় এবং অর্থও বেশি খরচ হয়। অধিকাংশ সময় ঘরে খাওয়ার চেষ্টা করা দরকার আমাদের। এতে শরীর ভালো থাকবে এবং ব্যয় কমে যাবে।

মাঝে মাঝে প্রয়োজনে বা শখে খেতে গেলে, যতটুকু খেতে পারব ততটুকু অর্ডার করব। অতিরিক্ত অর্ডার করব না।

ব্র্যান্ডের পেছনে ছুটা

ব্র্যান্ডের কাপড় ছাড়া পরবো না। ব্র্যান্ডের জিনিস না হলে ব্যবহার করবো না। এভাবে ব্র্যান্ড ব্র্যান্ড করে লাভ নেই। হাতে যখন টাকা থাকবে না, তখন কেউ আর আমার ব্র্যান্ডের জিনিস দেখবে না। এজন্য মাঝে মাঝে ব্র্যান্ডের বাইরের জিনিসও ব্যবহার করতে ও পরতে হয়।

তবে কারো মানসিকতা যদি এই হয় যে, আমি যা কিনব ভালো জিনিস কিনব। যেন এক জিনিসে কয়েক বছর চলে যায়। বার বার কেনার প্রয়োজন না হয়। তাহলে ব্র্যান্ডের জিনিস কেনাই ভালো। এতে সাময়িকভাবে মনে হবে যে, অনেক খরচ হলো। বাস্তবে অনেক ব্যয় কমে গেল।

008 21 linnet

স্বভাবে পরিবর্তন আনা

আমরা অনেকে ধুমপান করি। যে ধুমপানে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছি এবং অর্থের অপচয় করছি। পরিবেশ দূষণ করছি। একটু চিন্তা করে দেখুন, একটা বেনসন সিগারেটের দাম নূন্যতম ২০ এবং গোল্ডলিফের দাম ১৬ টাকা। কেউ যদি দিনে তিনটা বেনসন সিগারেট খায়, তাহলে তার প্রতিদিন অতিরিক্ত খরচ ৬০ টাকা। অর্থাৎ মাসে ১৮শ টাকা। অথচ ১৮শ টাকা দিয়ে একবেলা বাজার করা যায়। প্রতিমাসে ১৮শ টাকা সঞ্চয় করলে বছরে ২১ হাজার ৬শ টাকা সঞ্চয় হয়। যে টাকা দিয়ে ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা যায়। আপন মানুষদের উপহার দেওয়া যায়। এমনকি চাইলে একলা ভ্রমণও করা যায়। একইভাবে আমরা অনেকে পান-জর্দা ইত্যাদি খেয়ে থাকি। এখানেও একটু একটু করে অনেক টাকা খরচ হয়। যদি আমরা আমাদের স্বভাবে পরিবর্তন এনে এসব অপ্রয়োজনীয় খরচ বাঁচাতে পারি, তাহলে বিন্দু বিন্দু জল দিয়ে গড়ে তোলা সম্ভব মহাদেশ সাগর অতল।

পায়ে হেঁটে চলা

যতটুকু দূরত্ব পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়, ততটুকু দূরত্ব পায়ে হেঁটেই চলা। এতে শরীর ভালো থাকবে এবং রিকশা ভাড়া বেঁচে যাবে।

শখ ও চাহিদা 

যা দেখছি, তা-ই- কিনতে মন চাচ্ছে। দশটা শাড়ি আছে, এরপরও লাগবে। অন্য মানুষের আছে আমার নেই, এ স্বভাব দূর করতে হবে। যা না হলেই নয়, শুধু এমন জিনিস কিনি। যা বছরে একবার পরা হবে, এরপর আর কোনদিন স্পর্শও করা হবে না। এমন জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকি। এটাকে বলে মিতব্যয়িতা। যার জীবনে মিতব্যয়িতা থাকবে, তার জীবনে অভাব সহজে আসবে না। কেবল চাই আর চাই এ মনোভাব যার থাকবে, তার অর্থসংকট লেগেই থাকবে।

004 19 linnet

পতিত জমির ব্যবহার

যদি নিজের মালিকানাধীন জমি থাকে, তা অলস ফেলে না রাখা। তাতে প্রয়োজনীয় কিছু না কিছু চাষাবাদ করা। এতে করে কিছু অর্গানিক খাবার শরীরে প্রবেশ করবে। শরীর ভালো থাকবে। কিছু জিনিস কিনতে গেলে যা খরচ হতো, তা বেঁচে যাবে। যদি চাষাবাদ বেশি হয়, তাহলে তা বিক্রি করে অর্থ আয় করা। চাষাবাদ করলে কিছুটা সময় প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া যায়। এতে করে অর্গানিক বিনোদনও পাওয়া যায়।

001 20 linnet

মনে করে দিতে চাই ওয়ারেন বাফেটের উক্তি, “আপনার যা প্রয়োজন নেই তা যদি ক্রয় করেন তাহলে শীঘ্রই আপনার যা প্রয়োজন তা বিক্রি করতে হবে”।স্টিভ সিবোল্ডের উক্তি, অর্থ উপার্জনের দ্রুততম উপায় হলো সমস্যার সমাধান করা। যত বেশি সমস্যা আপনি সমাধান করবেন তত বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন

তথ্যসূত্র: (লেখায় ইংরেজি কনটেন্টের বাংলা সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে)

ছবি- ফ্রিপিক

Shop at Linnet
Total
0
Shares

Leave a Reply