Table of Contents
Toggleশীতকালে হাত-পায়ের ত্বক শুষ্ক হচ্ছে? প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ময়েশ্চারাইজ করুন
আর মাত্র কিছুদিন পরেই আসছে শীত। প্রস্তুতিটা এখন থেকেই নিতে হবে। এই সময়ে শুষ্কতাকে জয় করে সুন্দর রাখতে হবে ত্বক, সেই সাথে হাত-পা থাকবে দাগহীন ,মসৃণ,পরিষ্কার। এছাড়াও ব্যক্তিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল হাত-পা ও মুখমন্ডলের ত্বকের সাথে অমিল। তাই এখন থেকেই নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে মুখের যত্নের পাশাপাশি হাত,পা এর জন্য সমান যত্নআত্তি করতে হবে।
হাতের যত্ন
মুখের ত্বকের যত্ন আমরা প্রায় সবাই করে থাকি।কিন্তু হাত দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজ করলেও এর সঠিক যত্ন নেয়া হয় না।পরিচর্যার অভাবে বয়সের তুলনায় হাত বেশি বয়স্ক দেখাতে পারে। কারণ, হাতে বয়সের ছাপ পড়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের থেকে তাড়াতাড়ি।তাই হাতের সঠিক যত্নের প্রয়োজন।
হাতের যত্নের বিভিন্ন উপায়
ব্যক্তিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল হাত।মুখের ত্বকের সাথে হাতের ত্বকের অমিল হলে বেমানান লাগে।হাতের সঠিক পরিচর্যার পদ্ধতিগুলো হল-
ম্যানিকিওর
হাতের নখের সৌন্দর্য ও উজ্জ্বল ভাব বজায় রাখতে সপ্তাহে একবার বাড়িতে বা নামী বিউটি পার্লারে গিয়ে ম্যানিকিওর করাতে পারেন।তবে বাড়িতে করলে কম খরচে ও ক্ষতিকারক ক্যামিকেল এর প্রভাব হতে রক্ষা পাবেন।
ক্লিনজিং মিল্ক বা লোশন ব্যবহার করে
ভালো কোনো উৎপাদকের ক্লিনজিং মিল্ক বা বডি লোশন ব্যবহার করে হাতের ত্বক মোলায়েম রাখতে পারেন।
ব্লিচিং পদ্ধতি
হাতে ঘন কালো লোম থাকলে দেখতে খারাপ দেখায়।এক্ষেত্রে নামী বিউটি পার্লারে গিয়ে ব্লিচিং পদ্ধতিতে লোমের কালো রং হালকা করতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার
ঘরোয়া উপায়ে আমরা যেভাবে হাতের যত্ন নিতে পারি-
অলিভ ও চিনির স্ক্রাব
মৃত কোষ শুধু মুখে না হাতের ত্বকে ও জমা হয়।আর তাই এক্সফোলিয়েট করা দরকার।১-২ চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে তাতে একটু চিনির দানা মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে ফেলুন। এটি ৫-৭ মিনিট হাতে ঘষুন।কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।এতে করে হাত নরম হবে।
কমলার খোসা ও দুধের মাস্ক
কমলার খোসা ত্বকের জন্য খুব ই উপকারী।রোদে কমলার খোসা খুব ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে গুড়ো করে রেখে দেয়া যাবে। কমলার খোসা গুড়োর সাথে,বেসনও দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।এ পেস্টটি ২০ মিনিট হাতে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে হাতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
পাকা পাতিলেবুর রস
কনুই সবসময় পরিষ্কার না রাখলে বিশ্রী কালো দাগ পড়ে।পাকা পাতিলেবুর টুকরো কনুইয়ে ভালো করে ঘষে ঘষে লাগান।১০ মিনিট পর পানিতে ধুয়ে নিলে কালো দাগ আর থাকবে না।এতে করে কনুইয়ের চামড়া নরম থাকবে।
শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
নিয়মিত ব্যয়াম ও খেলাধুলা যেমন- স্কিপিং,ইয়োগা ইত্যাদি হাতের অতিরিক্ত মেদ কমায়।পুষ্টিকর খাদ্য যেমন-দুধ,শাকসবজি,ভিটামিন সি জাতীয় ফল খেলে ও সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে হাতের ত্বকের সৌন্দর্য বজায় থাকে।
গ্লাভস ব্যবহার করা
বেশিসময় হাত ভেজা রাখলে হাত শুষ্ক,রুক্ষ হয়ে যায়। তাই ঘরের কাজকর্ম,যেমন-বাসন মাজা,কাপড় ধোওয়া ইত্যাদি করার সময় রবার গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
মুখের ত্বক এ সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ও আমরা অনেক এ ই হাতে তা ব্যবহার করি না।ফলে রোদএ পুড়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ হয়।তাই বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই হাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
কোমল সাবান ব্যবহার
বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহারে হাতের ত্বক খসখসে হয়ে যায়,চামড়া উঠে। এজন্য কম ক্ষারযুক্ত বা সম্ভব হলে ক্ষারহীন সাবান ব্যবহার করতে হবে।
ম্যাসাজ করা
শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো হাতের যত্নে নিয়মিত ম্যাসাজ করুন।এতে করে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়,ত্বক কোমল হয়
অতিরিক্ত গরম–ঠান্ডা পানি পরিহার
প্রতিদিন ২ বার নরম সাবান ও পানিতে হাত ধোওয়া দরকার। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার নখের জন্য ক্ষতিকারক।
বাহুমূল পরিষ্কার রাখা
গোসল এর সময় সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে খুব ভাল করে বাহুমূল(বগল) পরিষ্কার করতে হবে।গোসল এর পর বাহুমূল শুকিয়ে গেলে ট্যালকম পাউডার ছড়িয়ে দিতে হবে।
পায়ের যত্ন
বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের বাসার বাইরে বের হতে হয়।ফলে পায়ে ধুলো-ময়লা জমে,ঘাম হয়।কিন্তু যত্নের ক্ষেত্রে আমরা পায়ের কথা প্রায় ই ভুলে যাই।ফলে পা ফাঁটা,কালো হয়ে যাওয়া, নখকুনি হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।তাই পায়ের যত্ন নেয়া জরুরি।
পায়ের যত্নের বিভিন্ন উপায়
পা দুটিকে ভালো রাখতে হলে এর যত্ন করতে হবে।যত্নশীলতার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যেমন-
সাবান ব্যবহার
গোসলের সময় ভালো করে সাবান দিয়ে পা পরিষ্কার করতে হবে। হাঁটুর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কেননা এখানে সবচেয়ে বেশি ময়লা জমে।অ্যালোভেরা কেটে হাঁটুতে ঘষলে কালোদাগ দূর হয়।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
প্রতিদিনের সব কাজ শেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে লোশন বা ক্রীম লাগিয়ে নিবেন।চাইলে পেট্রোলিয়াম জেলি ও ব্যবহার করতে পারেন। এতে পা মোলায়েম হবে,বলিরেখা ও পড়বে না।
নিয়মিত হেঁটে
পা দুটোকে কে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত হাঁটতে হবে।হাঁটাকে পায়ের সবচেয়ে উত্তম ব্যয়াম বলা হয়।কারণ এতে করে শুধু পায়ের চর্বি ই কমে না বরং সারা শরীরের ও উপকার হয়।
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার
কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ও কম খরচে যেভাবে আমরা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে পায়ের যত্ন নিতে পারি-
ওটমিল ও লেবুর স্ক্রাব
এক চামচ ওটমিল নিয়ে তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন। এটি দিয়ে ১০-১৫ মিনিট স্ক্রাবিং করুন।চাইলে লেবুর রস এর পরিবর্তে অলিভ অয়েল ও ব্যবহার করা যাবে।স্ক্রাবিং করলে মৃত কোষ দূর হয়ে পা হবে সতেজ,উজ্জ্বল,টানটান।
কলা ও মধুর মাস্ক
কলা চটকে নিয়ে তার সাথে মধু মিশিয়ে পায়ে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট।এরপর ধুয়ে ফেলুন হালকা কুসুম গরম জল দিয়ে। এতে করে পায়ের ত্বক মোলায়েম হবে,শুষ্কতা দূর হবে।
চালের গুড়ো ও লেবুর মাস্ক
লেবু কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। চালের গুড়োর সাথে দুধ, লেবুর রস বা মধু মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পায়ের কালো দাগ দূর হয়ে পা হবে সুন্দর,মসৃণ।
পেডিকিওর
মাসে ২-৩ বার করতে পারেন।বাড়িতে বসে নিজেই বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান এর সাহায্য বা ভালো কোনো বিউটি স্যালুন এ গিয়ে পেডিকিওর করাতে পারেন।বাড়িতে পেডিকিওর করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী হল ছোট তোয়ালে,নেল-কাটার,অলিভ অয়েল,নেলপলিশ রিমুভার,নেল বাফার,এমারি বোর্ড ইত্যাদি।
ঠিকমত নখ কাটা
ভুলভাবে নখ কাটার জন্য নখকুনি হয়ে থাকে। নখকুনি খুবই কস্টদায়ক।যাতে নখকুনি না হয় এজন্য সবসময় আড়ের দিকে সোজা করে নখ কাটতে হবে,কখনোই গোল করে নখ কাটা যাবে না।কারণ এতে নখে তাড়াতাড়ি ময়লা জমে।
সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার
বেমাপের জুতা পরলে পায়ের পাতায় একই জায়গায় বার বার বেশি চাপ পড়ে চামড়া শক্ত হয়ে উঠে কড়া পড়ে,নখকুনি ও হতে পারে। এজন্য সঠিক মাপের জুতা কিনতে হবে।স্টাইলের জন্য খুব সরু বা উঁচু হিলের জুতা কিনবেন না।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাবে পায়ের ত্বক কুচকে যেতে পারে, কালো হয়ে যেতে পারে। এজন্য বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্য ই পুরো পায়ে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
বেশিক্ষণ পা ঝুলিয়ে না বসা
খুব বেশি হাঁটাচলা করলে বা দীর্ঘ সময় ধরে পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে বা একনাগাড়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজকর্ম করলে পা দুটো ক্লান্ত হয়ে টনটন করে। এজন্য ফুট বাথ নিয়ে পা সতেজ করে তুলতে পারেন।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
ভিটামিন এর অভাব এ পায়ের গোড়ালি ফেঁটে যায়।এজন্য ভিটামিন বি ও সি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।পা যাতে শুষ্ক না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
সঠিক পরিচর্যার অভাবে নখ পচে যাওয়া,চামড়া উঠে যাওয়া,কুচকে যাওয়ার মত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে,যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। কম খরচে ও স্বল্প সময়ে যেহেতু হাত-পা এর বহুমুখী সমস্যার সহজ ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে,তাই নিজেকে ভালো রাখতে হলে প্রতিদিন অল্প করে হলে ও হাত পায়ের যত্ন নিতে হবে। আর নিয়মিত চর্চা করলে অচিরেই হাত ও পা হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ,মসৃণ,সতেজ।
তথ্যসূত্র: (লেখায় ইংরেজি কনটেন্টের বাংলা সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে)
ছবি- ফ্রিপিক
https://www.stylecraze.com/articles/effective-home-remedies-to-get-soft-hands/
পাঠকরা যা বলছেন
"আমি শুধু বলতে চাই আপনার নিবন্ধগুলির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! আমার প্রবলেম ছিল, এখানে প্রাপ্ত সমস্ত তথ্য অত্যন্ত সাহায্য করেছে। আপনি আমাকে আশা এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।"
"আমাদের মেইলিং তালিকায় সদস্যতা নিতে পৃষ্ঠার নীচে আপনার ইমেল ঠিকানা লিখতে ভুলবেন না, যাতে আপনি সর্বশেষ বিষয়বস্তু, নতুন পণ্য এবং লেটেষ্ট ব্লগ এর নোটিফিকেশন দ্রুত পেতে পারেন ।"
লিখাটি নিয়ে আপনার অভিমত কি?