Table of Contents
Toggleচল্লিশের পরে ত্বকের যত্নের গোপন রহস্য।
“আপনার মেয়ে কলেজে পড়ে?কিভাবে সম্ভব? আপনাকে দেখে তো সদ্য বিবাহিতা মনে হয়।”নতুন সহকর্মীর এমন মন্তব্যে একটু ও অবাক হল না শিখা। কারণ সে হরহামেশাই এমন প্রশংসায় অভ্যস্ত।শিখার বয়স ৪২ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ই তাকে ২৭/২৮ বয়সী ভেবে ভুল করেন।এমন লাবণ্যময়ী দ্বীপ্তিউজ্জ্বল ত্বক রাখতে অবশ্য অনেক কাঠখোড় পোড়াতে হয় তাকে।কারণ ৪০ পেরুলে ত্বকে আসে নানা পরিবর্তন, কোলাজেন কমে যায়,বলিরেখা পড়ে।এ বয়সকে সবাই বলে চালশে।চালশে মানে কাছের বস্তু দেখতে সমস্যা হওয়া।কিন্তু আমাদের সমাজে চালশে শব্দটি অসুখ হিসেবে নয় বরং নারীকে বু্ড়ি,অকেজো বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।তবে বর্তমানে শিখার মতো অনেক নারীরা এ ধারণাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে সমর্থ হয়েছেন। সাংসারিক জীবনের পাশাপাশি ক্যারিয়ার সামলে নিজের প্রতি যত্নশীল হচ্ছেন অনেকেই।আপনি ও যদি তাদের মধ্যে একজন হতে চান তবে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে হবে।চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক চল্লিশের পরে কিভাবে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে হবে –
ক্লিনজিং করে
ঘরে থাকলে অনেকে ভাবতে পারেন ক্লিনজিং এর দরকার কি?কিন্তু এ ধারণাটি মোটেও ঠিক নয়।রান্নার তাপ আমাদের ত্বকের কোলাজেন কমিয়ে আনে,পিগমেন্টেশন সৃষ্টি করে। আর যেহেতু ৪০ এর পর থেকেই ত্বকে ভাঁজ পড়া শুরু হয় তাই ত্বক পরিষ্কার এর ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।এক্ষেত্রে নামী উৎপাদকের ক্লিনজিং মিল্ক ব্যবহার করে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। তবে ক্যামিকেল ব্যবহারের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বহন করে। সুস্থ ত্বকের জন্য তাই প্রাকৃতিক ক্লিনজার বেছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বেসন,মুলতানি মাটি,শশা,আলু,অলিভ অয়েল সহ যে কোন উপাদান আপনার সুবিধা ও ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করে
সূর্যের ক্ষতিকারক অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের পিগমেন্টেশন বাড়িয়ে ত্বক নিষ্প্রাণ করে তোলে।এছাড়া ত্বকে ব্ল্যাকহেডস সৃষ্টি করে,ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে আনে। ফলে বলিরেখা দেখা দেয়। ৪০ এর পরে তাই ত্বকের বাড়তি যত্নে অত্যধিক সময় সূর্যের আলোতে অবস্থান করা থেকে বিরত থাকুন।সূর্যস্নান নিতে হলে বড় টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্য ই ভালো মানের সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না।আর কেনার সময় এসপিএফ ১৫ থেকে ৫০ এর মধ্যে সানস্ক্রিন বেছে নিবেন।
মেকআপ ব্যবহার কমিয়ে
মেকআপ ত্বকের ত্রুটি ঢেকে রাখতে সাহায্য করে। বয়স হওয়ার সাথে সাথে আমরা অনেকে ই ত্বকের বলিরেখা, দাগ লুকিয়ে রাখতে মেক-আপ ব্যবহার বাড়িয়ে দেই।এতে ত্বকের সৌন্দর্য সাময়িক সময়ের জন্য ফুটিয়ে তোলা গেলেও দীর্ঘস্হায়ী ক্ষতি হয়ে যায়।চল্লিশের পরে ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই তার সৌন্দর্য হারাতে থাকে তাই এ সময় অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার পরিহার করতে হবে।যথাসম্ভব ন্যাচারাল মেক-আপ ব্যবহার করুন।ঘুমানোর পূর্বে মেকআপ তুলতে ভুলবেন না কিন্তু।
চোখের মাস্ক ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে
বয়স চল্লিশের কোঠায় এলেই চোখের কোণায় ভাঁজ দেখা দেয়। তাই চোখের যত্নে শশার রস,আলুকুচি করে চোখে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আবার ময়েশ্চারাইজার হিসেবে চোখের চারপাশে অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।এতে বলিরেখা কমবে, কালোদাগ দূর হবে।
ম্যাসাজ করে
ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, ফলে ত্বক সজীব হয়ে ওঠে। দুই হাতের আঙুল দিয়ে নিচের থেকে ওপরের দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন।চাইলে ম্যাসাজ রোলার ও ব্যবহার করতে পারেন। ম্যাসাজ করার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। সকাল বিকাল যে কোনো সময় আপনার সুবিধামত ম্যাসাজ করতে পারেন।
ফেসমাস্ক ব্যবহার করে
তৈলাক্ত, শুষ্ক,স্বাভাবিক, মিশ্র সব ত্বকের জন্য উপযোগী ফেসমাস্ক রয়েছে। মাস্ক ব্যবহারে ত্বকের ময়লা,ব্রণ,কালোদাগ দূর হয়,ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল হয়।বয়স চল্লিশ পেরুলে তাই ত্বকের বাড়তি যত্নে নিয়মিত ফেসমাস্ক ব্যবহার করা উচিত। চন্দন-হলুদ,শশা -মধু ইত্যাদি নানা ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে আপনি চাইলে ঘরে বসেই ফেসমাস্ক তৈরি করতে পারেন।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে
ময়েশ্চারাইজার হল ত্বকের খাদ্য। আপনার বয়স যখন ৪০ এ পৌঁছাবে তখন ধীরে ধীরে ত্বকের আর্দ্রতা শুকিয়ে যাবে,কপাল এ ভাঁজ পড়া শুরু হবে,চোখের চামড়া কুচকে যাবে।তাই এ সময় ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।ভালো ফল পেতে অলিভ অয়েল,নারিকেল তেল এগুলো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
ধূমপান ও এ্যালকোহল বর্জন করে
সিগারেটে নিকোটিন নামক বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে যা ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে। ধূমপানের ফলে অল্প বয়সেই ত্বকে ভাঁজ, দাগ পড়তে দেখা যায়।তাহলে চিন্তা করুন বেশি বয়সে তো ত্বকের আর্দ্রতা এমনিতেই কমে আসে,তবে এ সময়ে ধূমপান আরও কতটা ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে। তাই ধূমপান,এ্যালকোহল পান এর মতো বাজে অভ্যাস থাকলে তা অনতিবিলম্বে পরিত্যাগ করে ফেলুন।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
চল্লিশ এর পরে আমাদের হজম শক্তি ধীরে ধীরে কমতে শুরু হয়।তখন হুটহাট যা ইচ্ছে তাই খেয়ে ফেলা উচিত নয়।কেননা খাবার হজম না হলে তা শরীরে বিষ হিসেবে জমা হয় যা ত্বকে ও প্রভাব ফেলে।এ সময়ে ত্বক ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন, ভিটামিন ই ও সি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় বাড়িয়ে নিন,অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, তেল-চর্বি এড়িয়ে চলুন। তবে ই ত্বক থাকবে সতেজ,লাবণ্যময়।
পরিমিত পানি পান করতে হবে
পানির অপর নাম জীবন। পানিশূন্যতা হলে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে,চুল পড়া বেড়ে যায়,ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই ৪০ এর পরে শুষ্ক ত্বক ও চুলের যত্নে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।যথাসম্ভব দুধ-চা,কফি পরিহার করে গ্রীন টি পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন ডিটক্স জুস ও খেতে পারেন।এতে পানির চাহিদা ও মিটবে,ত্বক ও পরিষ্কার থাকবে।
ব্যয়াম করে
বয়স বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে,স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে শুরু করে।সুস্থ শরীর ও ত্বক পেতে এবং স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে তাই নিয়মিত শরীরচর্চা,যেমন- হাঁটাহাঁটি,ইয়োগা,অ্যারোবিকস,সুইমিং ইত্যাদি করতে পারেন। আবার বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ বা স্পোর্টস ক্লাবে জয়েন করতে পারেন ।
এক্সফোলিয়েট করে
ত্বকের মরা কোষ তুলে ফেলতে সপ্তাহে দুইদিন এক্সফোলিয়েট করতে হবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রীম বেজড স্ক্রাব আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল বেজড স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে ক্যামিকেল এর পরিবর্তে চাইলে ঘরে বসে নিজেই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে কম খরচে এক্সফোলিয়েটর বানিয়ে নিতে পারেন।
মানসিক চাপ কমিয়ে
বয়স বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর মানসিক চাপ এসব রোগের জন্য দায়ী।শরীর খারাপ থাকলে এর প্রভাব ত্বকে ও পড়ে।তাই সুস্থ শরীরে সুন্দর ত্বক পেতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করে ইতিবাচক চিন্তা অনুশীলন করুন।এছাড়া মানসিক চাপ কমাতে নিজের শখের কোনো কাজ,যেমন- গাছ লাগানো, বই পড়া,রান্না করা,লেখালেখি করা এসব করতে পারেন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে
সারাদিন আমাদের ত্বক নানা ধূলা-দূষণের শিকার হয়।ঘুম এসব ক্ষতি পুষিয়ে তোলে।পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মুখে ব্রণ,ফ্যাকাশে হওয়া যাওয়া,পিগমেন্টেশনের মত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন।তাহলে আপনার ত্বকের প্রাণ ফিরে আসবে,বলিরেখা কমবে,জেল্লা ও বাড়বে।
পাঠক এতসব যত্ন -আত্তির পরে ও যদি আপনার ত্বকে ব্রণ,মেছতা,ব্ল্যাকহেডস এর মতো সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর মনে রাখবেন,মনের বয়স ই আসল বয়স।তাই মনটাকে চিরতরুণ রাখার চেষ্টা করুন। হাসুন,খেলুন,ভ্রমণ করুন,জীবনের ছোট বড় সকল প্রাপ্তিকে গণনা করুন,আশাবাদী হোন দেখবেন ত্বক ভেতর থেকে আভা ছড়িয়ে দিবে,শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
Visit: www.linnet.com.bd
তথ্যসূত্র: (লেখায় ইংরেজি কনটেন্টের বাংলা সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে)
ছবি- ফ্রিপিক
আরো দেখুন : ফেস স্টিমিংয়ের ৭ টি উপকারিতা এবং কীভাবে এটি সঠিকভাবে করবেন?
https://bestlifeonline.com/healthy-skin-after-40/
https://www.wikihow.life/Care-for-Your-Skin-over-40?amp=1
https://news.abplive.com/lifestyle/how-to-take-care-of-your-skin-after-the-age-of-40-1548792/amp
পাঠকরা যা বলছেন
"আমি শুধু বলতে চাই আপনার নিবন্ধগুলির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! আমার প্রবলেম ছিল, এখানে প্রাপ্ত সমস্ত তথ্য অত্যন্ত সাহায্য করেছে। আপনি আমাকে আশা এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।"
"আমাদের মেইলিং তালিকায় সদস্যতা নিতে পৃষ্ঠার নীচে আপনার ইমেল ঠিকানা লিখতে ভুলবেন না, যাতে আপনি সর্বশেষ বিষয়বস্তু, নতুন পণ্য এবং লেটেষ্ট ব্লগ এর নোটিফিকেশন দ্রুত পেতে পারেন ।"
লিখাটি নিয়ে আপনার অভিমত কি?